ফিনান্সিয়াল সিকিউরিটি
আর্থিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগের মাধ্যমসমূহ
প্রত্যেকেই সম্পদ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে, তবে দৈনন্দিন জীবন অনেকের জন্যেই এই লক্ষ্যকে কঠিন করে তোলে। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাংলাদেশিদের জন্য তা প্রায় অসম্ভব। সেই জন্য আপনার উপার্জনের একটা ক্ষুদ্র অংশ এমন কিছুতে বিনিয়োগ করা উচিৎ, যা পরবর্তীতে আপনার আয়ের উৎস হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে আপনার সম্পদ হয়ে উঠবে। যদিও বেশিরভাগ বাংলাদেশিরাই তাদের উপার্জিত অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাতে পছন্দ করেন, তবে ডিপোজিটের উপর কম হারের ইন্টারেস্ট রেট বিনিয়োগের অন্যান্য স্কিমগুলোকেও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সুচিন্তিত বিনিয়োগ আপনাকে আয় উপার্জন করতে এবং ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষায় সম্পদ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে। অতএব, শুধুমাত্র আপনার জীবনের বর্তমান অবস্থা, দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা, এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগের সঠিক পরিকল্পনাটি বাছাই করা কঠিন। পরিপূর্ণ সঞ্চয় পরিকল্পনার তুলনায়, একটি বিনিয়োগ পরিকল্পনা আপনাকে আর্থিকভাবে আরও বেশি লাভবান করে তোলে, যা সময়ের সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতিকেও হারাতে পারে।
বিনিয়োগ পরিকল্পনা কী?
বিভিন্ন প্রকার বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে সঞ্চয় পরিকল্পের সাথে বিনিয়োগ পরিকল্পনার পার্থক্যগুলো জেনে নেয়া যাক। একেকটি পরিকল্পনা একেকভাবে আপনাকে সম্পদ গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যা আপনার সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। ঝুঁকি-প্রতিরোধের জন্য, সঞ্চয় পরিকল্পনাগুলো সময়ের সাথে সাথে নিরাপদে অর্থ জমাতে সাহায্য করে। সাধারণত এই অর্থ যেকোন জরুরি ক্রয় বা ভবিষ্যত ক্রয়ের জন্য আলাদা করে রাখা হয়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী, বাংলাদেশে ৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র বা ৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মতো সঞ্চয়পত্রগুলো প্রকল্পের মেয়াদপূর্তি না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সুদের অর্থ প্রদান করে। তবে, একজন ব্যক্তি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থই বিনিয়োগ করতে পারেন। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো হলো সম্মিলিত বিনিয়োগ, যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন পাবলিক কোম্পানির স্টক এবং বন্ডে বিনিয়োগ করা হয় এবং তা একজন ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত হয়। এছাড়াও, মুদারাবা বিশেষ সঞ্চয় (পেনশন) প্রকল্প নামে একটি শরিয়াহ ভিত্তিক প্রকল্প রয়েছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পেশাদার এবং চাকুরীজীবীদেরকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বৃদ্ধ বয়সের জন্য সঞ্চয় করার সুবিধা দিয়ে থাকে। এই প্রকল্পের আওতাধীন অ্যাকাউন্টধারীরা মোট বিনিয়োগে তাদের অবদান অনুযায়ী, যে কোন অর্থবছরে মুদারাবা তহবিল থেকে প্রাপ্ত আয়ের ন্যূনতম ৬৫% অর্থ পেয়ে থাকেন।
অপরদিকে, বিনিয়োগ হলো এমন আর্থিক পদ্ধতি যা আপনাকে ভবিষ্যত প্রয়োজনের জন্য সম্পদ তৈরিতে সক্ষম করে তুলে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পদ্ধতি হলো স্টক এবং বন্ড। বাংলাদেশে এই ধরণের বিনিয়োগ খুবই সুবিধাজনক, কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট হারে মেয়াদপূর্ত হয় এবং সাধারণত মুদ্রাস্ফীতির হারকে ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া আরও বিভিন্ন বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে যা আপনাকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন শেয়ার বাজারের পণ্যে বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দেয়। বিনিয়োগের এই পরিকল্পনাগুলো একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ অর্থ প্রদান পদ্ধতি অনুযায়ী সম্পদ তৈরির মাধ্যমে বহু আকাঙ্খিত সুবিধাসমূহ এনে দেয়। বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা বীমাকেও বিনিয়োগের একটি উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি, মেটলাইফের [https://www.metlife.com.bd/solutions/savings-investments/] - সেভিংস এবং ইনভেস্টমেন্ট এর মতো পলিসিগুলো আপনার পলিসির নগদ মূল্য এবং লভ্যাংশকে বিনিয়োগ ও সুরক্ষা অ্যাকাউন্টে (আইপিএ) পরিবর্তিত করতে পারে। ফলে, আংশিক বা সম্পূর্ণ মেয়াদপূর্তি হয়েছে এমন পলিসির গ্রাহকরা তাদের বিদ্যমান পলিসির মেয়াদপূর্তি মূল্য ব্যবহার করে পলিসি থেকে প্রাপ্য সুরক্ষা সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারে বা সুবিধামত অন্য কোন পলিসিতে পরিবর্তিত করতে পারে। সুতরাং, আপনি যদি আপনার পরিবারের ভবিষ্যত আর্থিক অবস্থাকে সুরক্ষিত করতে চান, তবে লাভজনক কোন জীবনবিমায় বিনিয়োগ করা খুবই ভাল একটি সমাধান।
কীভাবে বুঝবেন কোন ধরণের বিনিয়োগ সবচেয়ে উপযোগী?
আপনার সব ধরণের আর্থিক লক্ষ্য পূরণে সক্ষম এমন কোন সুনির্দিষ্ট উপায় না থাকলেও, জীবনে প্রয়োজনীয় আয় বা অর্থের জন্য আপনার প্রত্যাশাগুলোকে ঝুঁকি সহনশীলতার সাথে ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলা জরুরি। এজন্যই বিভিন্ন প্রকার বিনিয়োগ এবং সঞ্চয় পরিকল্পনা যাচাই করা উচিৎ। একবার যদি আপনি বিনিয়োগের উদ্দেশ্যটি ঠিক করতে পারেন, এরপর সঠিক পরিকল্পনাটি বাছাই করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। আপনার বিনিয়োগ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করুনঃ
- যথেষ্ট যাচাই করার পর সাবধানতার সাথে বিনিয়োগ প্রকল্প বাছাই করুন
- অল্প সময়ে উচ্চতর লাভের প্রতিশ্রুতি দেয় এমন কোন স্কিমের ফাঁদে পা দেবেন না
- আপনার স্টক এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডে করা বিনিয়োগগুলো নিয়মিত পর্যালোচনা করুন
- বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত উপার্জনের কর জমা দিন
- যে সকল জটিল বিনিয়োগের ব্যাপারে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান নেই সেগুলো এড়িয়ে চলুন
- আপনি কত উপার্জন করছেন এবং কতজন লোক আপনার উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল
আবার, একজন অল্প বয়স্ক ব্যক্তির বিনিয়োগের উদ্দেশ্য এবং একজন বয়স্ক ব্যক্তির বিনিয়োগের উদ্দেশ্য অনেকটাই ভিন্ন। অতএব, সঠিক বিনিয়োগ মাধ্যমটি বাছাইয়ের জন্য একজন আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।