বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য কীভাবে বাজেট পরিকল্পনা করবেন?

জাফর সাদেক চৌধুরী

অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড চিফ ডিস্ট্রিবিউশন অফিসার

মেটলাইফ বাংলাদেশ

অনেক অভিভাবকই চান তাঁদের সন্তানকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠাতে যাতে শিক্ষার্থীরা নতুন সংস্কৃতি, শিক্ষা ও নতুন পরিবেশে নিজেকে সহজে খাপ খাওয়াতে পারেন এবং নানা দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তাই বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। ইউনেস্কো ইন্সটিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকস অনুযায়ী, ২০২১ সালে অন্তত ৪৪,৩৩৮ জন শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে গিয়েছেন, ২০১৫ সালে যে সংখ্যা ছিল ২৪,১১২ জন। বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বিদেশে পড়ার খরচও দিন দিন বেড়ে চলছে। সঠিক আর্থিক পরিকল্পনার অভাবে অনেক সময় এই ব্যয় মিটানো কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। তাই অভিভাবকরা যদি আগে থেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার সাথে জড়িত সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ এবং এই ব্যয় মিটানোর জন্য আর্থিক পরিকল্পনা করেন তাহলে তাদের খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হয়না। এর পাশাপাশি কিভাবে পড়াশোনার বিষয়, দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করতে হবে সে সম্পর্কেও জানা থাকলে পরিকল্পনা করা সহজ হবে।

পছন্দ অনুযায়ী দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন

বিদেশে যেতে ইচ্ছুক এমন শিক্ষার্থীদের উচিত প্রথমেই তাদের লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হবে এমন পড়াশোনার বিষয়, দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার এমন অনেক দেশ আছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের তুলনায় জীবনযাপনের খরচ অনেক কম। সেক্ষেত্রে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপনার পছন্দের প্রোগ্রাম বাছাই করার পাশাপাশি, সেই দেশে প্রচলিত মুদ্রা ও পড়াশোনা চলার সময় থাকা-খাওয়ার খরচের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে পুরোপুরি জেনে নিতে হবে। সেখানকার খরচ ও জীবনযাত্রার অন্যান্য আনুষাঙ্গিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করলে শিক্ষার্থীদের নিজেদের পছন্দ বাছাই করা খুব সহজ হবে।

টিউশন ফি, শিক্ষার খরচ, থাকা ও অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ

বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী হতে পারে এমন কিছু সহযোগী অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রাম বা কোর্স থাকে। পড়াশোনার প্রাথমিক খরচের সাথে এসব কোর্সের খরচও বিবেচনায় আনতে হবে। এসব কোর্সের মধ্যে ভাষা শিক্ষা কোর্স, ফিল্ড স্টাডিজ বা প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ থাকতে পারে। পাশাপাশি, পড়াশোনা চলাকালে থাকা-খাওয়া, পরিবহন, স্বাস্থ্যবীমা-সহ ভিসার যাবতীয় খরচও বিবেচনা করতে হবে। অনেক সময় বিদেশের শিক্ষা ব্যয়ের সাথে শিক্ষার্থীদের থাকার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকে না, সেক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যবস্থা যেমন ছাত্র আবাসন কেন্দ্র এবং কিংবা হোস্টেলে আবাসনের ব্যবস্থা করা যায় তা আগেই দেখে নিতে হবে । অনেক সময় শিক্ষা ভিসায় শিক্ষার্থীদের কাজের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ থাকে, যা শিক্ষার্থীর উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। তাই, কোর্সের সমস্ত খুঁটিনাটি জেনে নেয়ার পাশাপাশি এর সাথে সম্পর্কিত সম্ভাব্য সকল খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে। এছাড়া, মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড বা ইউরোর মতো বিদেশী মুদ্রায় এসকল ফি ও বাকি খরচ পরিশোধ করতে হয়। ফলে, মুদ্রার দাম ওঠানামার বিষয়টি বিবেচনা করে খরচ কিছু বাড়িয়ে ধরা ভালো।

ব্যয় কমাতে আগেই স্কলারশিপ, ইন্টার্নশিপ বা অনুদানের জন্য আবেদন করা

সঠিক পরিকল্পনার অভাবে স্টুডেন্ট ভিসায় অনুমতি থাকার পরও শিক্ষার্থীরা অনেক সময় স্কলারশিপ, ইন্টার্নশিপ বা অনুদান পাওয়ার সুযোগ নষ্ট করে ফেলেন। তাই, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কোর্স কাউন্সিলর বা স্টাডি প্রোগ্রাম এডভাইজরের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্য ভাতা আপনার আর্থিক চাপ কমাতে সহায়তা করবে। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগের আগেই এ বিষয়ে পুরোপুরি জেনে নিতে হবে।

পড়াশোনার বাড়তি খরচ সামাল দিতে বীমার সুযোগ নেয়া

বিদেশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য জন্য বেশ কিছু খরচের খাত জড়িত থাকে। তাই, অভিভাবকদের উচিত সন্তানের বিয়ের মতো অন্যান্য খরচের বাজেট করার পাশাপাশি, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্যও বাজেট পরিকল্পনা করে রাখা। বিশেষ করে, করোনা মহামারির পর যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে পড়াশোনার গড় খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। ফলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার খরচ ভবিষ্যতে কীভাবে সামাল দেয়া যাবে এখন থেকেই সেই চিন্তা করা উচিত। এক্ষত্রে শিক্ষাবীমা একটি ভালো উপায় হতে পারে। শিক্ষাবীমা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের পাশাপাশি অভিভাবকের কোনো অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর মতো ঘটনায় যাতে সন্তানের শিক্ষার ক্ষেত্রে খরচ যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তার ব্যবস্থা করে।  

এরকমই একটি শিক্ষাবীমা হচ্ছে মেটলাইফের ‘মাই চাইল্ড’স এডুকেশন প্রোটেকশন প্ল্যান’।  অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা যেন সন্তানের শিক্ষা জীবন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য এই পলিসিতে অভিভাবকদের জন্য রয়েছে নানা সুবিধা। এই পলিসিতে সঞ্চয়ের পাশাপাশি অভিবাবকের (পিতা/মাতা) মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার  ক্ষেত্রে বীমা নিরাপত্তা পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। বীমা পলিসি গ্রহণকারী অভিভাবকের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে পলিসির অভিহিত মূল্যের ১০০ শতাংশ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবে পরিবার। একই সময়ে, বীমা দাবি নিষ্পত্তির সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে অভিহিত মূল্যের ২ শতাংশ করে টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি পাবে আর কোনো প্রিমিয়াম প্রদান করা ছাড়াই। এছাড়া, বীমা পলিসির মেয়াদপূর্তিতে প্রযোজ্য বোনাসসহ আংশিক মেয়াদপূর্তি ও মেয়াদপূর্তির  টাকা পাবে পরিবারটি। ১২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত মেয়াদে মাই চাইল্ডস এডুকেশন প্রটেকশন প্ল্যান গ্রহণ করা যাবে। এ সব সুবিধার মাধ্যমে অভিভাবকেরা সন্তানদের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের প্রতিভা বিকাশে অবদান রাখতে পারবেন।

বিদেশে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন যেন শুধু স্বপ্নই রয়ে না যায় তার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও আর্থিক সুরক্ষা। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং এর উপর সন্তানের ভবিষ্যৎও অনেকটা নির্ভর করে। তাই আগে থেকেই এর সাথে জড়িত সকল পরিকল্পনা করা থাকলে খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হয়না এবং পছন্দনীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। তাই অভিভাবকদের উচিত বিদেশে উচ্চশিক্ষার সাথে জড়িত সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ এবং এই ব্যয় মিটানোর জন্য আগে থেকেই আর্থিক পরিকল্পনা করা।

higher-education

higher-education